
ড. মো. বায়েজিদ মোড়ল: বাংলাদেশে ছাগল পালনের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ ছাগলকে ছেড়ে বা মাঠে বেঁধে খাওয়ানো হয়। ছাগল একটি পরিবেশ সহনশীল প্রাণী, চরে বেড়াতে অভ্যস্ত এবং লতা-পাতা, ফল ও উদ্ভিদের উচ্ছিষ্ট খেয়ে বাঁচতে পারে। পালনে অল্প জায়গার প্রয়োজন হয় এবং পরিবারের সকলে বিশেষ করে মহিলা ও শিশুরা তা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের শতকরা ৭০টি পরিবার বিশেষ করে দরিদ্র পরিবার ছাগল পালন করে কিছু নগদ অর্থ আয় করে। এই জন্য ছাগল গরিবের গাভী হিসাবে সমাধিক পরিচিত। ছাগলের দুধ রোগীর পথ্য হিসাবে বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। বেকার যুবক, মহিলা, প্রান্তিক/ভূমিহীন পরিবার ও ক্ষুদ্র খামারীদের আত্মকর্ম সংস্থান এবং আমিষের চাহিদা পূরণে ছাগল পালন খুবই সহায়ক।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের পরিচিতি
বাংলাদেশী ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বিশ্বে শ্রেষ্ঠ জাতের ছাগল হিসাবে পরিচিত কারণ একটি ছাগী বৎসরে ৪-৬ টি বাচ্চা দিতে সক্ষম, মাংস অত্যন্ত নরম ও উপাদেয় এবং চামড়া খুবই নরম যা দিয়ে মূল্যবান জুতা ও ব্যাগ বানানো সম্ভব হয়। বাংলাদেশের সর্বত্র এ ছাগল পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গে এ ছাগল দেখা যায়। ছাগল একটি পরিবেশ সহনশীল প্রাণী, চরে বেড়াতে অভ্যস্ত এবং লতা-পাতা, ফল ও উদ্ভিদের উচ্ছিষ্ট খেয়ে বাঁচতে পারে। পালনে অল্প জায়গার প্রয়োজন হয় এবং পরিবারের সকলে বিশেষ করে মহিলা ও শিশুরা তা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের শতকরা ৭০টি পরিবার বিশেষ করে দরিদ্র পরিবার ছাগল পালন করে কিছু নগদ অর্থ আয় করে এই জন্য ছাগল গরিবের গাভী হিসাবে সমাধিক পরিচিত। ছাগলের দুধ রোগীর পথ্য হিসাবে বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। বেকার যুবক, মহিলা, প্রান্তিক/ভূমিহীন পরিবার ও ক্ষুদ্র খামারীদের আত্মকর্ম সংস্থান এবং আমিষের চাহিজদা পূরণে ছাগল পালন খুবই সহায়ক।
ছাগলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
* ছাগলকে বলা হয় গরীবের গাভী
* স্বল্প সময়ে মাংস উৎপাদন এবং পুষ্টি পূণর্বাসনে সহায়তাকরণ
* বৈদেশিক মুদ্রা (চামড়া রপ্তানী) আয়ের উৎস
* ছাগলের দুধ উপাদেয় এবং সহজ পাচ্য
* বেকারত্ব দূরীকরণ ও কাজের সুযোগ সৃষ্টি
* আত্ম কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক মুক্তি এবং ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি
* ছাগল পালনে ঝুঁকি কম
দেশী ছাগলের দুধ উৎপাদন
বেঙ্গল ছাগল সাধারণতঃ ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম দুধ দেয় তবে ভাল ব্যবস্থাপনায় এক থেকে দেড় লিটার দুধ দেয়। একাধারে ৬০ থেকে ৭০ দিন দুধ দেয়্
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্য
সাধারণতঃ গায়ের রং কালো হয় তবে সাদা বা ব্রাউন রং এর হতে পারে এবং পা ছোট ও কান সোজা থাকবে এবং ছাগীর ক্ষেত্রে মুখায়বের উপর া মার্কা সাদা দাগ থাকবে। এই জাতের ছাগল ১০-১২ বয়সে প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে এবং একটি ছাগী ৬ মাস অন্তর ২-৩টি বাচ্চা প্রসব করে। সদ্য প্রসূত ছাগল ছানার ওজন ১-১.৫ কেজি হতে পারে এবং ১২ মাস বয়সে একটি ছাগীর ওজন ১৫ কেজি এবং একটি পাঠার ওজন ২০ কেজি হতে পারে। একটি ছাগী থেকে ৮-৯ কেজি এবং একটি পাঠা থেকে ১০-১২ কেজি মাংস পাওয়া যেতে পারে।
আকারে ছোট, গায়ের রং সাধারণতঃ কালো। তবে সাদা, সাদা-কালো, খয়েরী সহ মিশ্র রংয়ের ছাগলও দেখা যায়। এদের কান ছোট, পাঠা এবং ছাগীর দাঁড়ি থাকে। পাঠার ওজন ২৫ থেকে ৪০ কেজি এবং ছাগীর ওজন ২০ থেকে ৪০ কেজি।
ছাগী ও পাঁঠা নির্বাচন
এ পদ্ধতিতে ছাগল খামার করার উদ্দেশ্যে ৬-১৫ মাস বয়সী স্বাভাবিক ও রোগমুক্ত ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের পাঁঠী/ছাগী সংগ্রহ করতে হবে। পাঁঠার বয়স ৫-৭ মাস হতে পারে।
পাঠা নির্বাচন
ছাগল পালনে পাঠার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই পাঠা নির্বাচনে নিম্নের গুণাবলীকে গুরুত্ব দিতে হবে ঃ
* নির্বাচনের সময় পাঠার বয়স কমপক্ষে এক বৎসর হতে হবে।
* অন্ডকোষের আকার বড় এবং সুগঠিত হতে হবে।
* পিছনের পা সুঠাম ও শক্তিশালী হতে হবে।
* সম্ভব হলে যাচাই করে নিতে হবে যে, নির্বাচিত পাঠা আকারে বড় এবং অধিক উৎপাদনশীল বংশের।
* ঘাড়ে, কাধে এবং অন্যান্য স্থানে বড় বড় লোম থাকবে।
* পিছনের পা দুটো শক্তিশালী ও সুঠাম হবে।
* শিং দুটো বড় এবং চোখ লাল হবে।
ছাগী নির্বাচন
ছাগল পালনের পূর্বে ছাগী নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ছাগী নির্বাচনে নিম্নের বিষয় গুলির গুরুত্ব অপরিসীম।
* নির্বাচিত ছাগী আকারে বড় হতে হবে।
* সম্ভব হলে এটা যাচাই করে নেওয়া যে নির্বাচিত ছাগীর মা, দাদী ও নানী বছরে দুই বার এবং প্রতিবারে দুই বা ততোধিক বাচ্ছা দেয়।
* গর্ভবতী কিংবা গর্ভ হওয়ার উপযোগী ছাগী পালনের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
* নির্বাচিত ছাগীর ওলান সুগঠিত এবং বাট দুটি সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
* ছাগীর মাথা লম্বা-মাঝারী এবং আকর্ষণীয় হবে।
* গলা ও ঘাড় সরু ও কাঁধ নরম হবে।
* পিঠ, পিঠের কুজ ও কাঁধ একটি সরল রেখায় পড়বে।
* ছাগীর ওলানদ্বয় নিখুঁত ও নরম হবে এবং দুগ্ধ নালিটি স্পষ্ট থাকবে।
* পা গুলো সমান ভাবে বিন্যস্ত থাকবে।
* কান খাড়া/সরল রেখায় থাকবে এবং ছাগলটির চাহনি ও সজাগতা দোদীপ্তমান থাকবে।
ছাগলের বাসস্থান
ষ্টল ফিডিং পদ্ধতিতে পালনে প্রতিটি বয়স্ক ছাগলের জন্য প্রায় ১০ বর্গফুট ঘরের জায়গা প্রয়োজন। ঘরটি বাঁশ, কাঠ বা ইটের তৈরি হতে পারে শীতের রাতে ঘরের বেড়া চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং মেঝেতে খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
* ছাগলের ঘর দুই প্রকার যথা মাটি/ইটের মেঝে এবং খুঁটির উপর মাচা হতে পারে।
* প্রকার যাহাই হউক না কেন ঘর উত্তর-দক্ষিণ লম্বা হবে যাতে করে সূর্যকিরণ ও বাতাস চলাচল করতে পারে। ঘরের আশে পাশে যাতে পানি না জমে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
* মেঝের পালন করতে হলে মেঝে শক্ত মাটি ও ইট দিয়ে তৈরী হতে পারে, তবে পাশের জমি থেকে ১ ফুট এবং একদিকে ১.৫ ইঞ্চি ঢালু হতে হবে।
* মাচা বা ভিটে থেকে ৩-৪ ফুট মুলি বাঁশের বেতড়া এবং উপরের অংশের তিন ফুট তারের নেট বা মুলি বাঁশের ঝাজরি তৈরী বেড়া ব্যবহার করা যায়।
* ভিটে থকে চালা ৬-৭ ফুট উঁচু হবে এবং চালা তরজা, পাতা, ছন বা খড় দিয়ে তৈরী করলে দামে কম হবে এবং আরামদায়ক হবে।
* টিনের চালা হলে অবশ্যই নীচে সিলিং দিতে হবে। তবে টিন দিয়ে তৈরী চালা বিবেচনা না করা ভাল।
* চালা এক-দুই বা চৌচালা হতে পারে।
* দেয়াল বাঁশের কাঠি দিয়ে তেরী করা যায়।
* পিলার বা খুঁটির উপর বাঁশের/কাঠের পাত বা তক্তা দিয়ে মাচা তৈরী করা যায়্ এই মাচা ভূমি থেকে ৩-৩.৫ ফুট উঁচু হবে। এই প্রকার ঘর ছাগলকে মাঠির স্যাতস্যাতে ভাব ও মেঝে শুষ্ক রাখতে সহায়তা করে এবং ক্রিমি রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য কর্ েতাছাড়া মাছা দিযে তৈরী ঘর পরিস্কার করা ও শুষ্ক রাখা সহজ, গোবর/মূত্র সংগ্রহ করা সহজ, কারণ মেঝের ফাক দিয়ে গোবর/মূত্র নিচে পড়ে যায়।
* মাচার বাঁশ বা কাঠের মধ্যে ১-২ ইঞ্চি ফাক রাখতে হবে।
* শীতকালে যাতে ছাগল শীতে আক্রান্ত না হয় সে জন্য মাচার উপরের বেড়া চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
ছাগলের জন্য মেঝের পরিমাণ নিম্নরূপ
১। জন্ম হতে ৪ মাস ৫ বর্গফুট
২। প্রাপ্ত বয়স ৭-১০ বর্গফুট
৩। পাঠার জন্য ২০-৩৫ বর্গফুট
আবদ্ধ অবস্থ্য়া পালন করতে ছাগলকে ঘরে থাকার অভ্যাস গড়ে তোলা
ছাগল সংগ্রহের সাথে সাথেই সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় রাখা উচিত নয়। প্রথমে ছাগলকে দিনে ৬-৮ ঘন্টা চরিয়ে বাকী সময় আবদ্ধ অবস্থায় রেখে পর্যাপ্ত খাদ্য (ঘাস ও দানাদার খাদ্য) সরবরাহ করতে হবে। এভাবে ১-২ সপ্তাহের মধ্যে চরানোর সময় পর্যাক্রমে কমিযে সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় রাখতে হবে। ততে বাচ্চা বয়স থেকে আবদ্ধ অবস্থায় রাখলে এ ধরনের অভ্যন্ততার প্রয়োজন নেই।
ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনা
* ছাগলকে ভাল চারণ ভূমিতে বেধে না ছেড়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ ঘন্টা চরানো যেতে পারে।
* চারণ ভূমিতে ঘাসের পরিমাণ কম হলে ছাগল প্রতি দৈনিক কমপক্ষে অদা থেকে এক কেজি ছাগলের খাওয়ার উপযুক্ত গাছের লতা পাতা খেতে দিতে হবে।
* শরীরের ওজন অনুসারে বড় অপেক্ষা মোটা ছাগল বেশী খায়। গর্ভবতী এবং দুগ্ধবতী ছাগলের বেশী খাদ্য আবশ্যক।
* সবুজ ঘাসের অভাবে বাচ্চা দেওয়ার পূর্বের এবং পরের একমাস মোট ৬০ দিন ছাগীকে দৈনিক ১৫০ গ্রাম দানাদার খাদ্য দিলে স্বাস্থ্যবান বাচ্চা পাওয়া যায়।
* একটি ছাগল শুধুমাত্র রসালো আঁশ জাতীয় খাদ্য যথা দুর্বা, কাচা ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারে। তবে দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধি, দুগ্ধ উৎপাদন ইত্যাদির জন্য কিছু পরিমাণ দানাদার খাদ্যের প্রয়োজন হয়।
* সদ্য প্রসূত ছাগল ছানা উঠে দাঁড়ানোর পর প্রথম সপ্তাহে ছানাকে মায়ের দুধ খেতে দিতে হবে। দুই এর অধিক ছানা হলে দুর্বল ছানাকে মায়ের দুধ দোহনের পর কুসুম গরম করে ফিডারের সাহায্যে খাওয়াতে হবে।
* বয়স ২-৩ সপ্তাহ হলে অল্প নরম ঘাস/লতাপাতা খেতে দিতে হবে। ৩-৪ সপ্তাহ বয়স থেকে তাদের কিছু দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
* জন্ম থেকে ১০ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত একটি ছানা দৈনিক ১০০-১৫০০ গ্রাম দুধ খেতে পারে তবে ৮ সপ্তাহ পর দুধ না পেলেও সমস্যা হবে না। ঐ সময় দৈনিক ২০ গ্রাম থেকে ১০০ গ্রাম দানাদার খাদ্যের প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া প্রায় ১-২ কেজি কাচা ঘাস/লতাপাতার প্রয়োজন হয়।
* একটি প্রাপ্ত বয়ষ্ক ছাগলের (১০-১২ মাস বয়স) প্রতিদিন ১৫০-৩০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য ও ২-৩ কেজি ঘাস/লতাপাতার প্রয়োজন।
* একটি বাড়ন্ত ছাগলকে আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা হলে ও খুঁটির সাথে বেঁধে বা পতিত জমি হলে ছেড়ে দিয়ে সকালে সূর্য টাঠার পা বা পড়ন্ত বেলায় ২-৪ ঘন্টা চরে খেতে দিতে হবে। তা না হলে ছাগলের শারীরিক বৃদ্ধি বা প্রজনন ক্ষমতা কমে যায় এবং সহজেই রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হয়।
ছাগল ছানা ও বড় ছাগল (পাঠা বা খাসী) এর দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ
খাদ্য উপকরণ পরিমাণ শতকরা হারে
১। ছোলা ভাঙ্গা ২০ ভাগ ১৫ ভাগ
২। ভাঙ্গা গম/ভূট্টা ২০ ” ৩৫ ”
৩। তিলের খৈল ৩৫ ” ২৫ ”
৪। গমের ভূষি ২০ ” ২০ ”
৫। খনিজ মিশ্রণ ৪ ” ৪ ”
৬। লবন ১ ” ১ ”
মোট ১০০ ১০০
একটি দুগ্ধবতি/গর্ভধারণ উপযোগী ছাগীর দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ
খাদ্য উপকরণ পরিমাণ শতকরা হারে
১। চাউলেরর খুদ ২০ ভাগ
২। গমের ভূষি ৩০ ”
৩। ছোলার ভূষি ১০ ”
৪। সরিষার খৈল ২০ ”
৫। তিলের খৈল ১৮ ”
৬। খনিজ মিশ্রণ ১.৫ ”
৭। লবন ০.৫ ”
মোট ১০০
খাদ্য পরিবেশন ব্যবস্থা
* ছাগল টেনে ছিড়ে খেতে পছন্দ করে এবং এ জন্য ছাগলকে লতাপাতা/ঘাস ঝুলিয়ে অথবা কোন বড় বড় ছিদ্রযুক্ত পাত্রে ভর্তি করে পরিবেশন করতে হয়। ছাগল ঝুড়ির নিচে ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে টেনে ছিড়ে খেতে পারে।
* ছাগলকে দানাদার খাদ্য আলাদা ভাবে পাত্রে দিতে হবে যেন কোন ছাগল মাত্রারিক্ত খেতে না পারে এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে।
* ছাগলের খাদ্য দৈনিক ৪ বার করে ভাগ করে দেয়া উত্তম।
* ছাগলের পানির খুব একটা প্রয়োজন হয় না তবুও একটি বড় প্লাষ্টিকের পাত্রে পরিষ্কার পানি রখা যেতে পারে যাতে প্রয়োজনে তা পান করতে পারে।
গর্ভবতী ছাগীর পরিচর্যা
* ছাগলের গর্ভকাল ১৪০-১৫০ দিন। তাই বাচ্চা প্রদানের ৮-১০ দিন পূর্বেই তাকে আলাদা করতে এবং বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। প্রতিদিন সকাল-বিকাল লক্ষ্য করতে হবে।
* প্রসবের ১-২ দিন পূর্বে ওলানে অতিরিক্ত দুধ জমলে (ওলান টান টান হলে) তা টেনে ফেলে দিতে হবে।
* সহজে বাচ্চা প্রসব না হলে ভেটেরিনারিয়ানের সহায়তা নিতে হবে।
* বাচ্চা প্রসবের পর ৮-১০ ঘন্টার মধ্যে গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা না পড়লে ভেটেরিনারিয়ান এর সহায়তা নিতে হবে।
* প্রসবের কয়েকদিন পূর্বে ও পরবর্তী ৭ দিন ছাগীকে ভাতের মাড় সহ দানাদার খাদ্য ও নরম ঘাস/লতাপাতা দিতে হবে।
ছাগলছানা পরিচর্যা
* ছানা প্রসবের পর তার শরীর চেটে পরিষ্কার করার জন্য তাকে ছাগীর সম্মুখে রাখতে হবে।
* তা না হলে পরিষ্কার একটি নেকড়া (কাপড়) এন্টিসেপ্টিক মিশ্রিত কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে ছানার শরীর পরিষ্কার ও স্লেশ্মো মুক্ত করতে হবে।
* ছানাগুলোকে শুষ্ক নরম বিছানায় রাখতে হবে।
* ধারালো জীবাণুমুক্ত ছুরি বা ব্লেড দ্বারা বাচ্চার নাভীর ৩-৪ ইঞ্চি যুক্ত রেখে কেটে দিতে হবে এবং ক্ষতস্থানে টিংচার আয়োডিন বা এন্টিসেপ্টিক মলম প্রয়োগ করতে হবে।
পাঠার পরিচর্যা
* ছাগলের পুরুষ বাচ্চা ৬ মাস বয়স হলে প্রজননের জন্য উপযুক্ত হয়। প্রজননের জন্য নির্বাচিত পাঁঠাকে আলাদা একক ধরে রাখা বাঞ্ছনীয়।
* একটি পাঁঠাকে সপ্তাহে ৩-৪ দিনের বেশী প্রজনন কাজে ব্যবহার করা সমীচীন নয় এবং ১০০ টি ছাগী প্রজননের জন্য একটি পাঁঠা যথেষ্ঠ।
* পাঁঠাকে সুপারিশকৃত পরিমাণের দানাদার খাদ্য দিতে হবে নতুবা তার প্রজনন ক্সমতা কমে যায়।
* সপ্তাহে অন্ততঃ দুইদিন পাঁঠার শরীর ব্রাশ করে পরিষ্কার করতে হবে। তার খাচার সামনে বেড়া দেয়া ৪০ বর্গফুট জায়গায় ঘুরে ফিরে চলার সুযোগ রাখতে হবে।
ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের বিশেষত্ব
* ৬ মাস বয়সেই ছাগী ও পাঁঠা যৌবনপ্রাপ্ত হয় তবে ১০ মাস পূর্বে তাদের প্রজনন কাজে ব্যবহার না করা বাঞ্ছনীয়।
* পুরুষ ছাগলকে খাসী করতে হলে ২-৪ সপ্তাহ বয়সে বার্ডিজো মেথোডে করা ভাল।
* জন্মলগ্নে একটি বাচ্চার ওজন ১-১.৫ কেজি হতে পারে এবং সুষম খাদ্য ও ক্রিমিনাশক ঔষধ প্রয়োগ করলে দৈনিক ৫০-৭০ গ্রাম দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
* বাড়ন্ত ছাগলের ওজন ৭ কেজি অর্থাৎ ৪ মাস না হলে দুগ্ধ সেবন (উইনিং) বন্ধ করা সঠিক নয়।
বাচ্চার পরিচর্যা
জন্মের পরপরই বাচ্চাকে পরিষ্কার করে শাল দুধ খাওয়াতে হবে। এক মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চাকে নিনে ১০-১২ বার দুধ খাওয়াতে হবে। বাচ্চার চাহিদার তুলনায কম দুধ থাকলে প্রয়োজনে অন্য ছাগী থেকে দুধ খাওয়াতে হবে। তাছাড়া দুধ না পাওয়া গেলে বাচ্চাকে বিকল্প দুধ (টেবিল-১) খাওয়াতে হবে। কিবল্প দুধ তৈরীর ক্ষেত্রে এক ভাগ বিকল্প দুধের সাথে ৯ ভাগ পানি মিশিয়ে অন্ততঃ ৫ মিনিট ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে ৩৯-৪০০ সেঃ তাপমাত্রায় (কুসুম কুসুম গরম) ছাগল ছানাকে খাওয়াতে হবে। দুধ খাওয়ানোর আগে ফিডার, নিপলসহ আনুসাংগিক জিনিসপত্র পানিতে ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। ১-১.৫ কেজি ওজনের একটি ছাগল ছানার দৈনিক ২৫০-৩৫০ গ্রাম দুধ প্রয়োজন। ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। বাচ্চার বয়স ৬০-৯০ দিন হলে দুধ ছেড়ে দেবে। বাচ্চার ৬০ দিন হতে ৯০ নি পর্যণ্ত গড়ে দৈনিক প্রায় ৪০০-৫০০ গ্রাম দুধ প্রয়োজনয় সাধারণতঃ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগীকে প্রয়োজনমত খাওয়ালে বাচ্চার প্রয়োজনীয় দুধ পাওয়া যায়। বাচ্চার ১ মাস বয়স থেকেই ধীরে ধীরে কাঁচা ঘাস এবং দানাদার খাদ্যে অভ্যস্ত করতে হবে।
বাচ্চার খাদ্য
* জন্মের পর এক থেকে সাত দিন বাচ্চাকে মায়ের দুধ এবং পরে সবুজ ঘাস খেতে দিতে হবে।
* বাচ্চাকে দেড় থেকে দুই ঘন্টা পর পর মায়ের দুধ খেতে দিতে হবে।
* মায়ের দুধ কম হলে কিংবা বাচ্চা বেশি হলে বাহিরের দুধ বোতলে খাওয়ানো দরকার।
* দুই মাস পর উৎপাদিত দুধ মানুষ বা অন্য ছাগলের বাচ্চাকে খাওয়ানো যেতে পারে।
বিকল্প দুধের সম্ভাব্য উপাদান
উপাদান পরিমাণ (%)
১। ননীমুক্ত গুঁড়া দুধ ৭০
২। চাল, গম বা ভূট্টার গুড়ি ২০
৩। সয়াবিন তৈল ৭
৪। লবণ ১.৫
৫। ডাই ক্যালসিয়াম ফসফেট ১.৫
৬। ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স ০.৫
ষ্টল ফিডিং পদ্ধতিতে ছাগলকে খাওয়ানো
ছাগল সাধারণতঃ তার ওজনের ৪-৫% হারে খেয়ে থাকে। এর মধ্যে ৬০-৮০% আঁশ জাতীয় খাবার (ঘাস, লতা, পাতা, খড় ইত্যাদি) এবং ২০-৪০% দানাদার খাবার (কুড়া, ভূষি, চাল, ডাল ইত্যাদি) দিতে হবে। একটি বাড়ন্ত খাসীকে দৈনিক ১-১.৫ কেজি কাঁচা ঘাস এবং ২০০-২৫০ গ্রাম দানাদার খাবার (টেবিল-২) দিতে হবে। দুই থেকে তিন বাচ্চা বিশিষ্ট ২৫ কেজি ওজনের ছাগীর দৈনিক প্রায ১.৫-২.৫ কেজি কাঁচা ঘাস এবং ৩৫০-৪৫০ গ্রাম দানাদার খাদ্য প্রয়োজন হয়। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক পাঁঠার দৈনিক ১.৫-২.৫ কেজি কাঁচা ঘাস এবং ২০০-৩০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য প্রয়োজন।
ছাগলের দানাদার খাদ্যের সাধারণ মিশ্রণ
খাদ্য উপাদান শতকরা হার (%)
১। চাল/গম/ভূট্টা ভাঙ্গা ৩৫.০০
২। গমের ভূষি/আটা/কুঁড়া ২৪.০০
৩। খেসারী/মাসকালাই/অন্য ডালের ভূষি ১৬.০০
৪। সয়াবিন/তিল/নারিকেল/সরিষা/খৈল ২০.০০
৫। শুকটি মাছের গুড়া ১.৫০
৬। ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট ২.০০
৭। লবণ ১.০০
৮। ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স ০.৫০
ছাগলের জন্য ঘাস চাষ
ঘাস সরবরাহের জন্য বিভিন্ন জাতের দেশী ঘাস খাওয়ানো যায়। ইপিল ইপিল, কাঁঠাল পাতা, খেসারী, মাসকালাই, দুর্বা, বাকসা ইত্যাদি দেশী ঘাসগুলো বেশ পুষ্টিকর। এছাড়া উচ্চ ফলনশীল নেপিয়ার, ¯েপ্রনডিডা, এন্ড্রোাপোগন, প্লিকাটুলুম ইত্যাদি ঘাস আবাদ করা যেতে পারে। ঘাস চাষের জন্য জমি ভালভাবে তৈরী করে হেক্টর প্রতি ১৫-২০ টন জৈব সার এবং ৫০, ৭০ এবং ৩০ কেজি যথাক্রমে ইউরিয়া, টিএসপি এবতং এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। ঘাস লাগানোর এক মাস পর এবং প্রতিবার ঘাস কাটার পর হেক্টর প্রতি ৫০ কেজি ইউরিয়া ছিটাতে হবে। ছাগলের জন্য ৩ নতং টেবিলে বর্ণিত উচ্চ ফলনশীল ঘাসগুলো সাধারণতঃ ২৫-৩০ দিন পর কাটা যায়।
বিভিন্ন ধরণের উচ্চ ফলনশীল ঘাসের উৎপাদনশীলতা
ঘাস হেক্টর প্রতি প্রয়োজনীয় কাটিং(হাজার)/ কাটিং লাগানোর দূরত্ব (মিটার)/ লাইন-লাইন কাটিং-কাটিং/ উৎপাদন (টন/হেঃ বছর)
নেপিয়ার (এরোসা) ২৫-২৬ ১ x ০.৫ ১৫০-২০০
নেপিয়ার (বাজরা) ২৫-২৬ ১ x ০.৫ ১৫০-২০০
নেপিয়ার (হাইব্রিড) ২৫-২৬ ১ x ০.৫ ১৭৫-২২০
ছাগলকে খড় খাওয়ানো
ঘাস না পাওয়া গেলে১.৫-২.০ ইঞ্চি (আঙুলের দুই কর) পরিমাণে কেটে নিম্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজত করে খাওয়ানো যেতে পারে। এজন্য ১ কেজি খড়ের সাথে ২০০ গ্রাম চিটাগুড়, ৩০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০ গ্রাম পানির সাথে মিশিয়ে ইউএমএস তৈরী করে খাওয়ানো যেতে পারে। এর সাথে ্্যালজি উৎপাদন করে দৈনিক ১.১.৫ লিটার পরিমাণে খাওয়াতে হবে। তবে ইউমএস এবং এ্যালজি খাওয়ানোর জন্য ছাগলকে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করতে হবে। এওকটি ছাগল দৈনিক ১.০-২.০ লিটার পানি খায়। এজন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।
ছাগল খাসী করানো
যেসব পাঁঠা বাচ্চা প্রজনন কাজে ব্যবহার করা হবে না তাদেরকে জন্মের ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে খাসী করানো উচিত। খাসী করার জন্য বার্ডিজোস কেস্ট্রেটর, রাবার রিং বা অন্ডকোষ কাটা পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। খাসী করানোর পর ক্ষতস্থানে মাছি বা অন্য কোন পোকা বা আঠালি যেন না বসে সেজন্য চিংচার অব আয়োডিন দিযে পরিস্কার করে সালফানিলামাইড পাউডার ছিটিয়ে দিতে হবে।
পাঁঠার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
পাঁঠাকে যখন প্রজনন কাজে ব্যবহার করা হয় না তখন তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে শুধু ঘাস খাওয়ালেই চলে। তবে প্রজনন কাজে ব্যবহারের সময় ওজন ভেদে ঘাসের সাথে ২০০-৫০০ গ্রাম পরিমাণ দানাদার খাবার দিতে হবে। প্রজননক্ষম রাখার জন্য প্রতিদিন পাঁঠাকে ১০ গ্রাম পরিমাণ গাঁজানো ছোলা দেয়া উচিত। পাঁঠাকে কখনই অতিরক্তি চর্বিযুক্ত হতে দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে দানাদার খাদ্য বাদ দিতে হবে।
ছাগলের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা
* ছাগল ঠাণ্ডায় খুব সংবেদনশীল তাই বৃষ্টিতে ভেজা থেকে রক্ষা করতে হবে।
* সর্বদা পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে, ডোবা-নালার পানি ছাগলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
সূর্য উঠার পূর্বে মাঠে চরালে ছাগলের গোল ও পাতা ক্রিমি হবার সম্ভাবনা থাকে একইভাবে পানি থেকে জেগে উঠা জমিতে চরালে পাতা ক্রিমি বেশী হয়।
* ছাগলের ঘর বা মাচা ও মাচার তলদেশ দৈনিক একবার করে হলে পরিষ্কার করতে হবে এবং শুষ্ক রাখার চেষ্টা করতে হবে। স্যাঁতস্যাঁত অবস্থায় ছাগলের স্বাস্থ্য সহজেই খারাপ হয়ে যায়।
* ছাগলের ঘরে বা চারনভূমিতে কুকুর/শিয়াল যাতে না চরতে পারে সেই দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
* ক্রিমিজনিত রোগ ছাড়া ছাগলের অন্যান্য মাআত্মক সংক্রামক ব্যাধিগুলো হলো পিপিআর,ক্ষুরারোগ, জলাতঙ্ক, ধনুষ্টংকার, তড়কা, কর্নটাজিয়াস, একযাইমা, এন্টেরোসেপটিসেমিয়া ও চর্ম রোগ।
রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক ব্যবস্থা
ক্রিমি প্রতিরোধক ব্যবস্থা
* ৩ মাস বয়স থেকে ৪ মাস অন্তর একবার করে ১০ দিনের ব্যবধানে ফিতা ক্রিমি ও গোল ক্রিমির জন্য আলাদাভাবে ঔষধ প্রয়োগ।
* পাতা ক্রিমির জন্য ৬ মাস বয়স হতে ৬ মাস অন্তর ঔষধ প্রয়োগ।
* ১০ মাস বয়স তেকে ৪ মাস পর পর নিয়মিত কলিজা কৃমির ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
* ১-২ মাস বয়সে একবার ককসিডিওসিস রোগের ঔষধ প্রয়োগ।
সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক
১। পিপিআরঃ ১ মি.লি. চামড়ার নীচে ৩ মাস বয়স থেকে বৎসরে ১ বার।
২। ক্ষুরারোগঃ ২ মি.লি. চামড়ার নীচে ৩ মাস বয়স থেকে বৎসরে ২ বার।
৩। তড়কাঃ ১ মি.লি. চামড়ার নীচে ৩ মাস বয়স থেকে বৎসরে ১ বার।
৪। গোটপকস্ঃ ০.২৫-০৫ মি.লি. চামড়ার নীচে ৬ মাস বয়স হতে বৎসরে একবার।
৫। কন্টিজিয়াস একথাইমাঃ এই ভেকসিন সহজলভ্য নয়। আমদানীকৃত ভেকসিন পাওয়া গেলে নির্দেশণা অনুযায়ী ২-৩ মাস বয়স হতে বৎসরে একবার প্রয়োগ করতে হবে।
৬। এন্টারোটকিস্মিয়াঃ ৪-৬ সপ্তাহ বয়সে চামড়ার নিচে ২.০ মি.লি. ১ বৎসর অন্তর একবার।
খামারের সব ছাগলকে বছরে ৩ বার (বর্ষা এবং শীতের শুরুতে জ্যৈষ্ঠ ও আশ্বিন মাসে এবং এ দু’মাসের মাঝে ফাল্গুন মাসে আরো ১ বার) কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে। ছাগলের মারাত্মক রোগ, যেমনঃ পিপিআর, গোটপক্স হলে অতি দ্রুত নিকটস্থ পশু হাসপাতালে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পিপিআর সহজে চেনার উপায় হল, এ রোগে শরীরের তাপ বৃদ্ধি পাবে (১০৪০ থেকে ১০৭০ পর্যন্ত), নাক দিয়ে পাতলা তরল পদার্থ নির্গত হবে এবং পরবর্তীতে নিউমোনিয়া (শ্বাস কষ্ট) ও অনর্গল পাতলা পায়খানা হতে থাকবে। এ রোগে আক্রান্ত এলাকায় ছাগলের ব্যাপক মৃত্যু হতে পারে। এছাড়া ছাগলে তড়কা, হেমোরেজিক সেপ্টিসেমিয়া, এন্টেরোটক্সিমিয়া, বিভিন্ন কারণে পাতলা পায়খানা এবং নিউমোনিয়া হতে পারে। সঠিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এ সকল রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে সুস্থ্য ছাগলের জন্য টেবিল ৪ এ উলেখিত টিকাদান কর্মসূচী অনুসরণ করতে হবে।
ছাগলের বিভিন্ন বয়সে টিকা প্রদানের ছক
রোগ ৩য় দিন ১০-১৪ দিন ৪ মাস ৫ মাস ৬ মাস
১। কন.একথাইমা ১ম ডোজ ২য় ডোজ
২। পিপিআর ১ম ডোজ
৩। গোটপক্স ১ম ডোজ
৪। এন্টারেটক্সিমিয়া ১ ডোজ
জীব-নিরাপত্তা
খামারে নতুন ছাগল আনার ক্ষেত্রে অবশ্যই রোগমুক্ত ছাগল সংগ্রহ করতে হবে এবং ১৫ দিন খামার থেকে দূরে অন্যত্র রেখে পর্যাবেক্ষণ করতে হবে। কোন রোগ দেখা না দিরে ১৫ দিন পর পিপিআর ভ্যাকসিন দিযে ছাগল খামারে অন্যান্য ছাগলের সঙ্গে রাখা যাবে। অসুস্থ ছাগড়লকে পালের অন্য ছাগল থেকে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। ছাগলের ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। সকল ছাগলকে বছরে ৫-৬ বার ০.৫% ম্যালাথায়ন দ্রবণে চুবিয়ে চর্মরোগ মুক্ত রাখতে হবে। প্রাজননশীল পাঁঠা ও ছাগীকে বছরে দু’বার ১-১.৫ মিঃ লিঃ ভিটামিন এ,ডি,ই ইনজেকশান দিতে হবে।
ছাগলের প্রজনন ব্যবস্থাপনা
খামারের পাঁঠা ১২-১৩ কেজি ওজন (৭-৮ মাস বয়স) হলে তাকে পাল দেয়া যেতে পারে। পাঁঠা বা ছাগী গরম হওয়ার ১২-১৮ ঘন্টা পর পাল দিতে হয্ অর্থাৎ সকালে গরম হলে বিকেলে এবং বিকেলে হলে পরদিন সকালে পাল দিতে হবে। পাল দেয়ার ১৪২-১৫৮ দিনের মধ্যে সাধারণতঃ বাচ্চা দেয়। পাল দেয়ার জন্য নির্বাচিত পাঁঠা সবসময় রোগমুক্ত ভাল বংশের ব্ল্যাক বেঙ্গর জাতের হতে হবে। আন্তঃপ্রজনন এড়ানোর জন্য ছাগীর বাবা বা দাদা বা ছেলে বা নাতীকে দিয়ে প্রজনন করানো যাবে না।
ছাগলের বাজারজাতকরণ
সুষ্ঠু খাদ্য ও অন্যঅন্য ব্যবস্থাপনায় ১২-১৫ মাসের মধ্যে খাসী ২০-২২ কেটি ওজনের হয়। এসময় খাসী বিক্রি করা যেতে পারে অথবা খাসীর মাংস প্রক্রিয়াজত করেও বিক্রি করা যেতে পারে। তবে কখনই কোন ”অসুস্থ্য ছাগল বিক্রি করা উচিৎ না”
ছাগলের বিভিন্ন রোগ
১। পি.পি.আর
রোগের উৎস : অসুস্থ পশুর সংস্পর্শে পি.পি.আর হতে পারে।
লক্ষণ : ছাগল পিঠ বাঁকা করে দাঁড়িযে থাকে, নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে তরল পদার্থ বের হতে থাকে। শরীরের তাপ বেড়ে যায় এবং পাতলা পায়খানা হয়।
চিকিৎসা : এ রোগে চিকিৎসায় ভাল ফল পাওয়া যায় না। তবে পানি শূন্যতা পূরণের জন্য স্যালাইন খাওয়াতে হবে। পাঁচ মাস বয়সে .িপি.আর টীকা দিতে হবে। টীকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তিন বৎসর পর্যন্ত কার্যকর থাকে।
২। ছাগলের নিউমোনিয়া
রোগের উৎস : স্যাঁত স্যাঁতে বর্ষা, অনুপযোগী আবহাওয়া এ রোগের মূল কারণ।
লক্ষণ : প্রথম ঠান্ডা পরে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নাক দিয়ে শ্লেষ্মা বের হওয়া এ রোগের লক্ষণ।
চিকিৎসা : পরিষ্কার, শুষ্ক, মুক্ত বায়ু চলাচল উপযোগী বাসস্থান হতে হবে। চিকিৎসার জন্র পশু ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
৩। ছাগলের কৃমি রোগ
রোগের উৎস : চারণভূমি, খাদ্য এবং পানির মাধ্যমে কৃমি রোগ বিস্তার লাভ করে।
লক্ষণ : শরীর দূর্বল হয়ে যায়। ডায়রিয়া হতে পারে এবং রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়।
চিকিৎসা : কয়েক মাস পর পর কৃমি নাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।
একটি আদর্শ ছাগল খামারের নমূনা
মূলধন
একটি গর্ভবতী/ গর্ভ নিকটবর্তী ছাগলের দাম আনুমানিক ২২০০-২৫০০ টাক্ াকেনার পরে দুইটি বাচ্চা এবং বৎসরের শেষে পুনরায় দুইটি বাচ্চা পাওয়া যাবে। প্রথম বাচ্চা ১২ থেকে ১৫ মাস বয়সে বিক্রি করা যাবে।
আয়
প্রথম ১২ থেকে ১৫ মাস
ক) প্রতিটি এক বৎসরের ছাগল ২৫০০ ২ ৫০০০ টাকা
খ) প্রতিটি ছয় মাসের ছাগল ১২০০ ২ ২৪০০ টাকা
মোট ৭৪০০ টাকা
ব্যয়
ক) ঔষধ ও টীকা ৩০.০০ টাকা
খ) ছাগল বাচ্চা দেওয়ার পূর্বে ও পরের এক ২৭ কেজি
মাস প্রতিদিন ১৫০ গ্রাম দানাদার খাদ্য
মোট ১৮০দিনে ২৭ কেজি x ২০টাকা = ৫৪০.০০ টাকা
অতএব প্রথম ১২ থেকে ১৫ মাসে মুনাফা = (৭৪০০- ৫৪০) = ৬৮৬০.০০ টাকা। মূলধন ২৫০০ টাকা পরিশোধ করলেও ৪৩৬০ টাকা এবং একটি ছাগী খামারীর কাছে থেকে যাবে। পরবর্তীতে বৎসরে খামারীর লাভ হবে ৬৮৬০.০০ টাকা।





















