ভূমিকা

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের কৃষি ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সার্বিক অবদানের গুরুত্ব বিবেচনায় মোটামুটি ৫০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকেই গরুর পরেই মহিষের স্থান । সাধারণভাবে বর্তমানে মহিষকে এশিয়ার প্রাণী বলা হয়। মহিষ দেখতে কালো, ধুসর অথবা বাদামী রঙের দেখা যায়। কৃষি কাজে কর্ষণের শক্তি হিসেবে, কাছাকাছি দূরত্বে পণ্য পরিবহণের কাজে এবং মানুষের নিকটবর্তী পথ চলাচলে গাড়ি টানার জন্য, অর্থ সাশ্রয়ী ও পরিবেশ দূষণমুক্ত শক্তির প্রযোজনে, খাদ্য বস্তু হিসেবে তুলনামূলকভাবে অধিক ননী-সমৃদ্ধ দুধ আর মোটা আঁশযুক্ত মাংসের উৎস হিসেবে, জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য জৈব সার হিসেবে হাড় ও গোবরের ব্যবহার, মানুষের ব্যবহার্য সৌখিন সামগ্রী তৈরীর জন্য শিং, হাড় ও চামড়ার ব্যবহারের জন্য মহিষ পালনের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। ভারত উপমহাদেশের মহিষ দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে পরিচিত। এজন্য দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতের মহিষকে দুধ উৎপাদনের মেশিন বলা হয়। গরু পালনের তুলনায় মহিষ পালন তুলনামূলকভাবে সহজ আর কম ব্যয় বহুল। গরু পালনের খরচের তুলনায় মহিষ পালনের ক্ষেত্রে বাসস্থান এবং খাদ্য খরচ অনেকটা কম কারণ মহিষ বালুচর আর নদী বিধৌত বাথান এলাকায় সবুজ ঘাস খেয়ে থাকে। গরুর তুলনায় মহিষের রোগবালাইও অপেক্ষাকৃত কম। মহিষ গরম সহ্য করতে পারেনা এ কারণে কাদামাটি ও পানিতে গড়াগড়ি করতে পছন্দ করে। আরামের জন্য পানি আর ছায়াযুক্ত জায়গায় থাকতে আরাম বোধ করে। দিনের মধ্যভাগে এবং সূর্যাস্তের কিছুটা আগে মহিষকে বেশ কয়েক ঘন্টা কাদাপানিতে গড়াগড়ি করে অবস্থান করতে দিতে হয়। মহিষ গড়ে ১৫ বছর বাঁচে এবং সমগ্র জীবণচক্রে প্রায় ১৬-১৭টি বাচ্চা প্রদান করে থাকে। উল্লেখিত এসব তথ্যাদি সাধারণ মহিষ পালনকারীদের জানা থাকলেও আধুনিক প্রযুক্তি-ভিত্তিক পালন পদ্ধতিতে মহিষ পালনের জন্য বিস্তারিত তথ্য জেনে রাখা ভাল । তাই আমাদের সেবাদান কেন্দ্র থেকে মহিষ পালনের পদ্ধতিগত প্রযুক্তির উপর ধারণা দেয়ার প্রয়াসে কিছু প্রশ্নোত্তর পর্বের উপস্থাপন করা হলো:
সংশ্লিষ্ট তথ্য

১. পৃথিবীর কোন কোন দেশে মহিষ পালিত হয়?
• গ্রীষ্মপ্রধান এবং অ-গ্রীষ্মপ্রধান দেশসমূহে মহিষ পালিত হয়।
২ মহিষ পালনে পৃথিবীর কোন দেশ শীর্ষ-স্থানীয়?
• চীন।
৩. বর্তমানে পালিত মহিষের বংশধর কোন জাতের?
• এশিয়ার বন্য-প্রজাতির মহিষ।
৪. কোন কোন প্রয়োজনে মহিষ পালিত হয়?
• কৃষি কাজ, পরিবহন, দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য মহিষ পালিত হয়।
৫. এশিয়া মহাদেশে উৎপাদিত মহিষের দুধের পরিমাণ কী রকম?
• এ অঞ্চলের মহিষ প্রায় ৩৭% দুধ উৎপাদন করে।
৬. বাংলাদেশে মহিষ থেকে কি পরিমাণ মাংস উৎপাদিত হয়?
• পাঁচ হাজার টনের বেশি মাংস উৎপাদিত হয়।
৭. মহিষকে জীবন্ত ট্রাক বলা হয় কেন?
• কৃষি কাজ ও ভার বহনের বিশেষ উপযোগী বিধায় মহিষকে জীবন্ত ট্রাক বলা হয়।
৮. মহিষকে দামী ব্লাক পাথর বলা হয় কেন?
• মহিষ অপেক্ষাকৃত অধিক উপকারী বিধায় থাইল্যান্ডে মহিষকে দামী ব্লাক পাথর বলা হয়।
৯. মহিষ কোন অঞ্চলে বিচরণ করতে ভালবাসে?
• সামান্য লোনাপানির অঞ্চলে মহিষ বিচরণ করতে ভালবাসে।
১০. উপকূলীয় অঞ্চলে কিভাবে মহিষ পালন করা হয়?
• সুনির্দিষ্ট স্থান ও দুপুর বেলায় মালিক কেবল খামারের মিঠাপানি, সামান্য দানাদার খাদ্য, ভূষি, খৈল ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করে মহিষ পালন করেন।

১১. মালিক কখন মহিষের দুগ্ধ দোহন করেন?
• আধাবনে দলবেধে মহিষ যখন খাবারের লোভে বিচরণ করতে আসে মালিক তখন নৌকাযোগে ঘাটে আসেন এবং দুগ্ধ দোহন করেন।
১২. কোন এলাকায় এ ধরণের মহিষ পালন ও দোহন করা হয়?
• ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের কাকিনগর ও গোদাভরী নদীর মোহনার বনাঞ্চলে আধাবনে মহিষ পালন করা হয়।
১৩. বাংলাদেশের কোন এলাকায় অধিক সংখ্যক মহিষ পালিত হয়?
• খুলনা ও বাগেরহাটে সরকারী তত্ত্বাবধানে খামারে মহিষ পালিত হয়। এ ছাড়াও সমতল ভূমিতে বিগত ২০ বছরে গরুর তুলনায় মহিষের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
১৪. মহিষ পালনে সাধারণ সুবিধাগুলি কি?
• গরুর তুলনায় রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং প্রতিকূল আবহাওয়ায় মহিষ অতি সহজে বাঁচতে পারে।
১৫. মহিষ পালনে বাড়তি সুবিধাসমূহ কি?

• গরুর তুলনায় আকারে বড় হওয়ায় মহিষ বেশি পরিমাণে মাংস ও গোবর এবং বিশেষ ধরণের মোটা চামড়া উৎপাদন করতে পারে।
১৬. মহিষ কি ধরণের খাবার সহজে খেতে পারে?
• গরুর তুলনায় মহিষ বেশি আঁশ-জাতীয় খাদ্য সহজে হজম করতে পারে। তাই আঁশ-জাতীয় নিম্ন মানের খাবার সরবরাহ করে গরম মৌসুমে মহিষ পালন করা যায়। এ কারণে বেশি মোটা খড় মহিষকে খাওয়ানো যেতে পারে।
১৭. গরুর দুধের তুলনায় মহিষের দুধ উৎকৃষ্ট কেন?
• গরুর দুধের তুলনায় মহিষের দুধে প্রায় দ্বিগুণ চর্বি থাকে।
১৮. মহিষের বাসস্থানের খরচ কেমন এবং মহিষ ব্যবহারের সুবিধা কি কি?
• অপেক্ষাকৃত অল্প খরচে বাসস্থান তৈরি করা যায় এবং কাদা অবস্থায় অনেক বেশি জমি চাষ করা যায়।
১৯. কাজ করানোর জন্য মহিষ কত বছর রাখা যেতে পারে?
• কাজ করানোর জন্য প্রায় ২০ বছর মহিষ ব্যবহার করা যেতে পারে।
২০. মহিষের দুধের অন্যান্য গুণাগুণ কি?
• মহিষের দুধে কঠিন পদার্থ ও চর্বি বেশি থাকে এবং গরুর তুলনায় দুধ ও মাংসে কলেস্টেরল কম থাকে।
২১. মহিষের দুধে কি কি দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য তৈরি করা হয়?
• মহিষের দুধ অনেক প্রকার মিষ্টি খাদ্যপণ্য তৈরির উপযোগী।
২২. মহিষকে কোন ঋতুতে প্রজনন করানো হয়?
• সুনির্দিষ্ট কোন প্রজনন ঋতু নেই তবে শীতকালে সাধারণত প্রজননের আধিক্য দেখা যায়।
২৩. মহিষকে সাধারণত কত ভাগে ভাগ করা যায়?
• দু’ধরণের মহিষ আছে যথা, জলাভূমির মহিষ এবং নদীর মহিষ।

২৪. জলাভূমি এবং নদীর মহিষের মধ্যে কি ধরণের পার্থক্য দেখা যায়?
• জলাভূমি এবং নদীর মহিষের মধ্যে ক্রোমোজম সংখ্যা, দৈহিক গঠন, আকৃতি এবং শিঙের অনেক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
২৫. দু’ধরণের মহিষ সাধারণত কোন ধরণের কাজ বা প্রয়োজনে পালন করা হয়?
• দৈহিক বৈচিত্র্যের জল-মহিষ কাজের শক্তি হিসাবে আর নদীর মহিষ প্রধানত দুধ ও মাংসের জন্য পালন করা হয়।
২৬. জল-মহিষের কোন জাত আছে কি?
• জল-মহিষের কোন জাত নেই।
২৭. নদীর মহিষের জাত আছে কি?
• নদীর মহিষের আঠারটি জাত আছে।
৮. নদীর মহিষের জাতগুলো কি?
• নীলি, রাভী, মুরাহ্, সুর্তি, জাফরাবাদি, মেহসানা, কুনদি, ভাদোয়ারি এবং ইতালীর ভূ-মধ্যসাগরীয় মহিষ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২৯. বাংলাদেশে-প্রাপ্ত মহিষের ধরণ ও জাতের নাম কি কি?
• বাংলাদেশে প্রধানত নদীর মহিষ, জলাভূমির মহিষ এবং শংকর জাতের মহিষ পাওয়া যায়।
৩০. বাংলাদেশে কোন এলাকায় বেশি মহিষ পালিত হয়?
• উপকূল ও হাওর এলাকায় বেশি মহিষ পালিত হয়।
৩১. বাংলাদেশে নদীর মহিষ কোন কোন অঞ্চলে পালিত হয়?
• দেশের মধ্য ভাগ ও পশ্চিমাঞ্চলে নদীর মহিষ পাওয়া যায়।
৩২. নদীর মহিষের উৎপত্তি কোথায়?
• নদীর মহিষের উৎপত্তি ভারতে তবে বর্তমানে বাগেরহাটে পাকিস্থান থেকে আমদানীকৃত নীলী-রাভী জাতের মহিষ বাংলাদেশের সরকারী মহিষ খামারে পাওয়া যায়।
৩৩. দেশীয় জলাভূমির মহিষ কোন অঞ্চলে পাওয়া যায়?
• দেশের পূর্বাঞ্চল এবং উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়।
৩৪. বাংলাদেশে শংকর জাতের মহিষ কিভাবে সৃষ্টি হয়?
• মুরাহ অথবা নীলি-রাভী জাতের মহিষের শংকরায়ণের ফলে দেশীয় শংকর মহিষ সৃষ্টি হয় যা মূলত উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়।
৩৫. দেশীয় নদী মহিষের উৎপাদন ক্ষমতা কেমন?
• উৎপাদন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি এবং সুযোগ পেলে এসব মহিষ প্রতি বছর বাচ্চা দিতে পারে।
৩৬. জলাভূমি মহিষের অধিবাস বিস্তৃতি কোথায়?
• মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, ফিলিপাইনস, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং চীন।
৩৭. জলাভূমির মহিষের সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ কি?
• দেহের সামনের অংশ হালকা ও পেছনের অংশ মাংসল তাই এদের আকৃতি অনেকটা ব্যারেলের মত দেখায়। এদের শিং দুটি বেশ লম্বা এবং চওড়া।
৩৮. জলাভূমি মহিষের অভ্যাস বা পছন্দ কি কি?

• স্রোতহীন বা স্থির কাঁদাযুক্ত জলামাটিতে গড়াগড়ি দিতে পছন্দ করে।
৩৯. জলা-মহিষের দেহের গঠন কি রকম?
• খর্বাকৃতির বলিষ্ট দেহ, চওড়া মাংসল, ছোট মুখমন্ডল, ছোট ও চিকন পা এবং বুকের বেষ্টনী চওড়া।
৪০. জলাভূমির মহিষের শরীরের রং কেমন দেখায়?
• সাধারণত গাঢ় ধূসর বর্ণের হয় তবে কালো বা সাদা রংয়ের মহিষও দেখা যায়।
৪১. জলাভূমির মহিষের শিং দেখতে কেমন?
• সম্পূর্ণ চওড়া, অর্ধ-গোলাকৃতির বা অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির।
৪২. জলাভূমি মহিষের ওলান দেখতে কেমন?
• ছোট আকৃতির এবং পিছনের দুই পায়ের পিছনে অবস্থিত।
৪৩. জলাভূমি মহিষের দৈহিক ওজন কত হতে পারে ও কাঁধের উচ্চতা কত?
• জলাভূমি মহিষের ওজন ৩০০-৬০০ কেজি এবং কাঁধের উচ্চতা ১৩০-১৩৫ সে.মি.।
৪৪. জলাভূমি মহিষের বয়:সন্ধিক্ষণ কখন আসে এবং গর্ভধারণ কাল কতদিন হতে পারে ?
• প্রায় ৩ বছরে বয়:সন্ধিক্ষণ প্রাপ্ত হয় এবং গর্ভধারণ কাল ৩২৫-৩৩০ দিন।
৪৫. জলাভূমি মহিষের ক্রোমোজোম সংখ্যা কত?

• জলাভূমি মহিষের ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪৮।
৪৬. নদীর মহিষের অধিবাস বিস্তৃতি কোথায়?
• বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, নেপাল ও শ্রীলংকা।
৪৭. নদীর মহিষের সাধারণ দৈহিক বৈশিষ্ট্য কি রকম?
• সামনে এবং পিছনের অংশ মাংসল, দেখতে ত্রিভুজাকৃতির।
৪৮. নদীর মহিষের পছন্দনীয় কাজ কি?
• স্রোতযুক্ত পানিতে সাঁতার কাঁটতে বেশ পছন্দ করে।
৪৯. নদীর মহিষের দেহের গঠন কি রকম?
• অপেক্ষাকৃত লম্বা ও বড় দেহ তবে বুকের বেষ্টনী ছোট।
৫০. নদীর মহিষের শরীরের রং কেমন?
• সাধারণত কালো রংয়ের হয় তবে মাথা এবং পায়ের মাঝে মাঝে সাদা সাদা ছাপ আছে।
৫১. নদীর মহিষের শিং দেখতে কেমন?
• গোলাকার তবে বিভিন্ন ধরণের বাঁকা ও লম্বা।
৫২. নদীর মহিষের ওলান দেখতে কেমন?
• অনেকটা বড় এবং দুধালো জাতের পশুর মত।

৫৩. নদীর মহিষের দৈহিক ওজন এবং কাঁধের উচ্চতা কতটুকু?
• নদীর মহিষের ওজন ৪৫০-৮০০ কেজি এবং কাঁধের উচ্চতা পুরুষ ও স্ত্রীর ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১২০-১৫০ সে.মি. এবং ১১৫-১৩৫ সে.মি.।
৫৪. নদীর মহিষের বয়:সন্ধিক্ষণ ও গর্ভধারণ কাল কতদিন?
• ষাঁড় দুই বছরে পাল দেওয়ার উপযোগী হয় এবং বকনা ৩৫ মাস বয়সে বাচ্চা দেয়।
৫৫. নদীর মহিষের ক্রোমোজোম সংখ্যা কত?
• নদীর মহিষের ক্রোমোজোম সংখ্যা ৫০।
৫৬. জাফরাবাদী মহিষের উৎপত্তি ও বিস্তৃতি কোথায়?
• ভারতের গিরবন এবং জাফরাবাদ শহরের চারপাশে জাফরাবাদী মহিষ বসবাস করে।
৫৭. জাফরাবাদী মহিষের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি?
• বৃহদাকৃতির দেহ, কপাল খুবই স্পষ্ট, প্রশস্ত মোটা শিং ঘাড়ের উভয় পাশে উঁচু হয়ে থাকে, ঘাড় মাংসল, গলগম্বল ও ওলান সুগঠিত, শরীর দীর্ঘ ও লম্বাটে এবং গায়ের রং কালো।
৫৮. জাফরাবাদী মহিষের উচ্চতা, দৈর্ঘ্ ও ওজন কি রকম?
• পুরুষ ও স্ত্রী মহিষের উচ্চতা যথাক্রমে ১৪০ এবং ১৩০ সে.মি., দৈর্ঘ্ যথাক্রমে ১৬৭.৫ ও ১৬০ সে.মি. এবং ওজন যথাক্রমে ৫৯০ ও ৪৫০ কেজি।
৫৯. জাফরাবাদী মহিষ কতটুকু দুধ দেয় এবং কি কাজে লাগানো যায়?
• স্ত্রী মহিষ প্রতিদিন ১৫-২০ লিটার দুধ দেয় যাতে চর্বির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে; পুরুষ মহিষ চাষাবাদ ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়।

৬০. মুরাহ্ মহিষ অন্য আর কোন নামে পরিচিত?
• দিল্লী মহিষ নামে পরিচিত।
৬১. মুরাহ্ মহিষের নাম মুরাহ্ রাখা হয়েছে কেন?
• শিং কুঞ্চিত (মুরাহ্) ও কুণ্ডলীকৃত বলে মুরাহ্ নামকরণ করা হয়েছে।
৬২. মুরাহ্ মহিষের শরীরের বৈশিষ্ট্য কি?
• শরীর জামকালো বর্ণের, কোন কোন সময় লেজের আগা, কপাল ও পায়ের নিচে সাদা ছাপ থাকে, মোটাসোটা, পেছনের অংশ বেশ চওড়া, দেহের তুলনায় মাথা ছোট তবে কপাল চওড়া; গাভীর গলা লম্বা ও চিকন, চ্যাপ্টা ছোট শিঙের প্রথমাংশ পিছনের দিকে গিয়ে পরে উপরে উঠে পাকিয়ে থাকে।
৬৩. মুরাহ্ মহিষের ওলান দেখতে কি রকম?
• দেখতে সুন্দর, বড় আকৃতির, লম্বা বাঁট, পিছনের বাট লম্বা।
৬৪. মুরাহ্ মহিষের দুধ উৎপাদন কি পরিমাণ হতে পারে?
• প্রথম বাচ্চা প্রসবের পর প্রায় দশ মাসে ১৪০০-২০০০ লিটার (গড়ে প্রতিদিন ২.২-২.৭ লি.) দুধ দেয়, দুধের চর্বি প্রায় ৭% যা ঘি ও মাখন তৈরির জন্য বেশ চাহিদাপূর্ণ।
৬৫. মুরাহ্ মহিষ কি কি কাজে লাগে?
• পুরুষ মহিষ কৃষি কাজের জন্য উপযোগী, মহিষের জাত উন্নয়ণের ক্ষেত্রে কৃত্রিম প্রজননে ষাঁড় ব্যবহৃত হয়।
৬৬. নীলি-রাভী মহিষের উৎপত্তিস্থল ও বিস্তৃতি কোথায়?
• পাকিস্থানের সুতলেজ নদীর তীরস্থ এলাকায় নীলি জাতের মহিষের অবস্থান। নদীর পানির বর্ণ নীল এবং নদীর পাড়ে বিচরণ করে বিধায় নীলি নাম দেয়া হয়েছে। পাকিস্থানের রাভী নদীর অববাহিকায় পাওয়া যায় বিধায় এ মহিষের নাম দেয়া হয়েছে রাভী।

৬৭. নীলি জাতের মহিষের আদি বাসস্থান কোথায়?
• পাকিস্থানের মন্টেগোমারী ও মুলতান এবং পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলায় নীলি জাতের মহিষের আদি বাসস্থান।
৬৮. নীলি-রাভী জাতের মহিষের প্রধান বৈশিষ্ট্য কি কি?
• মাঝারী দেহের পিছনের অংশ মোটাসোটা, চোখ-কপাল-লেজ সাদা, লেজ বেশ লম্বা, মাথা বড় ও চওড়া, শিং ছোট, শিংয়ের মাঝখানে উপরে ফোলানো, মাথা-মুখের পশম মোটা, গলা লম্বা ও সরু, চওড়া গোলাকৃতি বুক, বলিষ্ট পা, পিঠ সোজা, গলকম্বল থাকে না, নাভীর ফাঁপা ছোট থাকে, গায়ের রং কালো, কপালে ক্ষুরে সাদা বর্ণ, সারা শরীরে সাদা ছাপ আছে।
৬৯. নীলি-রাভী মহিষের ওজন কত?
• ষাঁড়ের ওজন ৬০০ কেজি এবং গাভীর ওজন ৪৫০ কেজি।
৭০. নীলি-রাভী মহিষ কি পরিমাণ দুধ দেয়?
• প্রথম বাচ্চা প্রসবের পর প্রতিদিন ৯-১৮ লিটার হিসাবে মোট দুধ দানকালে ২৫০দিনে প্রায় ৩৬০০ লিটার দুধ দেয়।
৭১. নীলি-রাভী মহিষ কি কাজে ব্যবহৃত হয় এবং কোথায় পালন উপযোগী?
• নিরীহ ও শান্তশিষ্ট বিধায় ডেইরী খামারে পালন করা যায় এবং কৃষি কাজের জন্য বেশ উপযোগী।

৭২. মেহসানা জাতের মহিষের উৎপত্তিস্থল কোথায়?
• ভারতের গুজরাট রাজ্যের উত্তরে মেহসানা জেলা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় এ জাতের মহিষ বসবাস করে।
৭৩. মেহসানা জাতের উৎপত্তি হয়েছিল কিভাবে?
• মুরাহ্ ও সুরতি জাতের মহিষের মাধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে মেহসানা জাতের মহিষের উৎপত্তি হয়েছিল।
৭৪. মেহসানা জাতের মহিষ দেখতে কেমন?
• মেহসানা জাতের মহিষের দেহের গড়ন মধ্যম, মুখ ও ঘাড় লম্বাটে, হালকা পা, চওড়া কপাল, কালো বর্ণ, মুখ, পা ও লেজের আগায় সাদা ছাপ আছে, উন্নত বাটে সমৃদ্ধ বেশ বড় ওলান, নাকের ছিদ্র বড়, গলকম্বল নেই. কাঁধ বেশ চওড়া এবং কাস্তে আকারের বাঁকা শিং।
৭৫. মেহসানা জাতের মহিষের ওজন কত?
• ষাঁড় প্রায় ৫৪০ কেজি এবং গাভী-মহিষের ওজন ৩৬৫-৪৫৫ কেজি।
৭৬. মেহসানা জাতের মহিষ কত বয়সে বয়:সন্ধিক্ষণ প্রাপ্ত হয় এবং দুধ উৎপাদনের হার কেমন ?
• তুলনামূলকভাবে অতি অল্প বয়সে মেহসানা জাতের মহিষ বাচ্চা দেয়, প্রতিবার বাচ্চা প্রসবের পর দৈনিক ২৬ লিটার হিসাবে প্রায় ২৬৭০ লিটার দুধ দেয় এবং দুধে চর্বির পরিমাণ ৬.৫%।
৭৭. নাগপুরী জাতের মহিষের উৎপত্তিস্থল কোথায় এবং এ জাতের মহিষের অপরাপর নাম কি কি?
• নাগপুর জাতের মহিষ কোথাও কোথাও মারাথওয়াডা এবং বেরারি মহিষ নামে পরিচিত। মধ্য ভারতের নাগপুর অঞ্চলে এ জাতের মহিষের অবস্থান।
৭৮. নাগপুরী জাতের মহিষের বৈশিষ্ট্যসমুহ কি?
• গায়ের রং কালো, মুখ পা ও লেজের আগায় সাদা ছাপ আছে, বক্ষ মোটা, মাথা ও ঘাড় লম্বা, বাট চিকন, শিং তলোয়ারের মতো পিঠে প্রায় ঠেকানো, পেট লম্বা, গাভীর পা হালকা ও লেজ ছোট এবং নাভীর ফ্লাপ থাকে না।
৭৯. নাগপুরী মহিষের ওজন কত কেজি হতে পারে?
• ঘাঁড়ের ওজন প্রায় ৫২৫ কেজি এবং গাভীর ওজন প্রায় ৪২৫ কেজি।
৮০. নাগপুরী মহিষ কি প্রয়োজনে পালন করা হয় এবং কতটুকু দুধ দেয়?
• কাজে কর্মে ধীরস্থির না-হলেও কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয় যা ৩০০ দিনে প্রায় ১০০০ লিটার দুধ দেয়, দুধে চর্বির পরিমাণ ৫.৫-৭.0%।
৮১. সুরতি জাতের মহিষের পরিচয় কি?
• সুরতি জাতের মহিষ দেশী বা নাডিয়াডি নামেও পরিচিত। ভারতের গুজরাট রাজ্যের কায়রু ও বড়োদা জেলায় এ জাতের মহিষ পাওয়া যায়।

৮২. সুরতি জাতের মহিষের জাতের বৈশিষ্ট্য কি কি?
• গায়ের রং প্রধানত কালো ও তামাটে হয়, পশমের রং তামাটে ও ধূসর বর্ণের মিশ্রণ, গাভীর গলা চিকন, ষাঁড়ের গলা মোটা ও ভারী, লম্বা চওড়া মাথা, শিংয়ের মধ্যস্থল বেশ উঁচু ও উত্তলাকৃতির, শিং লম্বা কাস্তের মত চ্যাপ্টা, গলকম্বল-চুঁড়া থাকে না, সোজা চওড়া পিঠ, লেজ সরু লম্বা, লেজের পশম সাদা এবং ওলান বড় ও সুবিন্যস্ত।
৮৩. সুরতি মহিষের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা কি পরিমাণ এবং কি জন্য পালন করা হয়?
• সুরতি মহিষ শুধুমাত্র দুধ উৎপাদনের জন্য পালিত হয় যা দৈনিক ৬ লিটার হিসাবে প্রতি বিয়ানে ১৫৫০-১৬০০ লি. দুধ দেয় এবং দুধে চর্বির পরিমাণ প্রায় ৭.৫%।
৮৪. কুন্ডি জাতের মহিষের উৎপত্তি স্থল কোথায় এবং এদের বৈশিষ্ট্যসূমহ কি?
• পাকিস্থানের সিন্ধু এলাকায় পাওয়া যায়। খাটো মুচরানো শিং, গায়ের রং গাঢ় কাল, শক্তিশালী খাটো পা, ওলান ও বাঁটের গঠন উন্নত।
৮৫. কুন্ডি জাতের মহিষ কখন বয়:সন্ধিক্ষণ প্রাপ্ত হয় এবং কি পরিমাণ দুধ দেয়?
• চার-পাঁচ বৎসর বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয় এবং প্রায় ১০ বৎসর দুধ দেয়।
৮৬. কুন্ডি মহিষের ওজন কত কেজি এবং কি পরিমাণ দুধ দেয়?
• ওজন প্রায় ৬০০ কেজি, প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ লিটার দুধ দেয়, কোন কাজের জন্য তেমন উপযোগী নয়।

৮৭. কুয়াকাম এবং কুয়াইটিউ জাতের মহিষ কোথায় পাওয়া যায়?
• থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে পাওয়া যায়।
৮৮. কুয়াকাম এবং কুয়াইটিউ মহিষের জাতের বৈশিষ্ট্য কি কি?
• অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির, চামড়া পুরু, রং কাল কিংবা হালকা ধূসর এবং ত্বক কাল, লোম থাকে, দেহ ও মুখ মুন্ডল লম্বা এবং প্রশস্ত ঘাড় পাতলা, স্ত্রী মহিষের গলা পাতলা ও হালকা, কাঁধের উচ্চতা ১৩০-১৪০ সে.মি.।
৮৯. কুয়াকাম এবং কুয়াইটিউ জাতের মহিষের দৈহিক ওজন কত কেজি?
• পুরুষ মহিষ ৩৬০ কেজি এবং স্ত্রী মহিষ ৪৫০ কেজি।
৯০. কুয়াকাম মহিষের পছন্দনীয় বিষয় কি?
• গাছের পাতা খেতে পছন্দ করে এবং কুয়াইটিউ অপেক্ষা গরম সহ্য করতে পারে।
৯১. কুয়াকাম মহিষ কি পরিমাণ দুধ দেয় এবং কি কাজে লাগে?
• খুব কম পরিমাণ দুধ দেয় তবে মূলত কৃষি কাজে এবং মাল বহনের কাজে ব্যবহৃত হয়।
৯২. কুয়াইপারা মহিষের অধিবাস কোথায়, এদের বৈশিষ্ট্য কি এবংএরা কি পরিমাণ দুধ দেয়?
• থাইল্যান্ডের মীসও এবং টাপ অঞ্চলে পাওয়া যায়। ছোট আকৃতির মহিষ, হাড্ডি চিকন, পা ছোট , অপ্রশস্ত কাঁধ, পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় ওজন ৩০০-৩৫০ কেজি, দুধ প্রদানের তথ্য জানা নেই।
৯৩. লাল রঙের মহিষ কোথায় পাওয়া যায়?
• পৃথিবীতে লাল রঙের মহিষ আছে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে যাদের দেহ দীর্ঘ, লাল রঙের ঘন লোম দ্বারা আবৃত এবং দৈহিক ওজন প্রায় ৩৫০ কেজি।
৯৪. এশিয়াতে ম্যারিড নামের কোন মহিষ আছে কি এবং এ জাতীয় মহিষের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি?
• মায়ানমারে ম্যারিড নামের মহিষ পাওয়া যায়। এ জাতীয় মহিষের আকার ছোট, গায়ের পশম লম্বা ও গাঢ়, পায়ের দিক খাটো ও সোজা, স্ত্রী ও পুরুষ মহিষের ওজন যথাক্রমে ৩০০ ও ৩১৫ কেজি, দুধ উৎপাদনের তথ্য জানা নেই।
৯৫. বানিজ্যিক খামারে মহিষের খাদ্য খরচ কি রকম হতে পারে এবং খরচ কম হওয়ার কারণ কি?
• মহিষের খাদ্য খরচ মোট উৎপাদন ও রক্ষনাবেক্ষণ খরচের প্রায় ৬০%। মহিষ রাস্তার ধারের খাবার খায় বিধায় খাদ্য খরচ অপেক্ষাকৃত কম।
৯৬. মহিষকে কি কি সামগ্রীর খাদ্য খাওয়ানো হয়?
• সাধারণত রাস্তার ঘাস, ধানের খড়, আখের ডোগা, ছোবড়া, খৈল ও ভূট্টা খেয়ে জীবন ধারণ করে যার মধ্যে খাদ্যের পুষ্টি অনেক কম থাকে।






















